আজকাল ফেসবুক, বিভিন্ন ব্লগে দেখলাম, শালীনতা নিয়ে খুব হইচই, পেজ এর পর পেজ খোলা হচ্ছে, সেখানে বলা হচ্ছে মেয়েদের পর্দা করতে, ওড়না ঠিক করে পড়তে ইত্যাদি। ভালো কথা; কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে ভদ্রতাবোধ এর মত শালীনতাবোধ ও যার যার কাছে। আপনি কোনোদিনও এই ব্যাপারটা কারো মধ্যে জোর করে আনাতে পারবেন না। শালীনতাবোধ যদি না থাকে তাহলে কেউ বোরখা পড়লেও তাকে খারাপ লাগবে। যেমন, আমাদের ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে ২ জন ছিল, যাদের একজন ফতুয়া-জিন্স পড়ত। সে পড়ত একটু লম্বা, কিছুটা ঢিলে ফতুয়া যার হাতা লম্বা, আর ইয়া বড় ওড়না, মাথা আর শরীর এমনভাবে ঢাকা থাকত যে কোনোভাবে তাকে দৃষ্টিকটু বলা যাবে না। ধর্মের মত মেনে চলাও হল। আর আরেকজন যিনি বোরখা পড়তেন, এমনভাবে পড়তেন, " নাউজুবিল্লাহ্," এর বেশি কিছু বলার নাই। শালীনতাবোধ থাকলে যে পোষাক পড়া হোক না কেন, সেটা নিয়ে কিছু বলার নাই।
ইভ-টিজিং এর প্রধাণ কারন মেয়েদের পোষাক হতে পারে না, হ্যাঁ, কিছু কিছু আছে যারা এদেশীও না বিদেশীও না তাদের জন্য বাংলাদেশ এর অন্য মেয়েদের খারাপ বলা যাবে না, আর তারা ইভ-টিজিং এর শিকারও হয় না (ব্যাতিক্রম ছাড়া)। ইভ-টিজিং এর শিকার এর বেশীরভাগ ই গ্রাম/ মফস্বলের মেয়েরা বা স্কুল-কলেজের মেয়েরা। এদেশের কোনো স্কুল-কলেজের মেয়েরা পোষাক দৃষ্টিকটু নয়। একইভাবে গ্রাম/ মফস্বলের মেয়েরা সাধারণত দৃষ্টিকটু পোষাক পড়ে না। কারণ, এসব জায়গায় মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক কড়াকড়ি, যারা দৃষ্টিকটু পোষাক পড়বে তাদের জন্য বাস করাটাও সহজ না সেখানে।
তাহলে ইভ-টিজিং এর কারন??? আমার কাছে মনে হয় সামাজিক ও ব্যাক্তিগত মূল্যবোধের অভাব। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম কি শিখছে? তারা সিনেমা দেখে শিখে কিভাবে এক বখাটে ছেলের সাথে নায়িকার প্রেম হয়, তারা শিখে যা করা হোক না কেন দোষ হবে মেয়েদের। আমার এক বান্ধবী তার আরেক বক ধার্মিক বন্ধু্র কথা বলেছিল,যার নাকি মেয়েদের শালীনতা নিয়ে কথা বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়; অথচ, নিজে প্যান্ট নামিয়ে এমনভাবে পড়ে যে, তার নিচে কিছু পড়ে থাকলে সেটা দেখা যায়, প্যন্ট চলে যায় গোড়ালির নিচে, তো তাকে কিছু বললে সে বলে, "ছেলেদের এসব না মানলেও চলে (!!!!!), আর মেয়েদের রুচিহীন পোষাক দেখলে কমেন্ট করলে কোনো দোষ হয় না।" কেন? এতোই যখন রুচিহীন মনে হয়, কমেন্ট করার সময় কি রুচিতে বাধে না?
কোনো মেয়ে দৃষ্টিকটু পোষাক পড়লে তাকে টিজ করার অধিকার চায় যারা, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, টিজ করে কি কারো মধ্যে শ্লীল-অশ্লীলবোধ আনা সম্ভব?? সবচেয়ে বড় কথা, যারা এমন না তাদের আপনারা টিজ করছেন কোন অধিকারে?
ব্যাক্তি-স্বাধীনতা অবশ্যই আছে, কে কি পড়বে না পড়বে তা সম্পূর্ণ তার নিজের ব্যাপার। কিন্তু, শ্লীল-অশ্লীলবোধ সবার থাকা উচিত। একমাত্র পরিমিত শ্লীল-অশ্লীলবোধ এর জন্যই কারো পড়া বোরখা-শাড়ি অশ্লীল মনে হয়, আবার কারো ওয়েস্টার্ন পোষাক পড়া দেখতে খারাপ লাগে না।
কেউ যদি এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে যান, যেমন ইভ-টিজিং এর প্রতিবাদ করলে তাকে বলা হয় নারীবাদী, আবার পরিমিত শ্লীল-অশ্লীলবোধ নিয়ে বলতে গেলে মৌলবাদী। ঢালাওভাবে মেয়েদের বা ছেলেদের দোষ দিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু, সমস্যা বা সমাধান নিয়ে কেউ ভাবে না।
আইন করে কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হয় নি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দরকার, পারিবারিক বন্ধনের দৃড়তা, যেন আমরা আমাদের সন্তানকে অন্যায়পথে যাওয়া থেকে রুখতে পারি, যেন আমরা বোঝাতে পারি যে, নারীদেরকে ভোগপণ্য হিসেবে না দেখা হয়। সামাজিক মুল্যবোধ, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। অপ-সংস্কৃতির প্রভাব থেকে দূরে রাখতে হবে তরুন সমাজকে; আমি বলছি না যে, বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই, বাইরের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নতির পথে চলতে হলে আমাদের অবশ্যই তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে, তাদের সংস্কৃতির ভালো দিক গুলো (যেগুলো আমাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ) গ্রহণ করতে হবে, আর খারাপ দিকগুলো বর্জন। আমাদের সংস্কৃতির উন্নতি সাধন করতে হবে যেন এর প্রভাব অন্য সংস্কৃতির প্রভাবকে কমিয়ে দেয়
আশা করি, একদিন এ দেশ থেকে ইভ-টিজিং নামক ব্যাধি কমে যাবে.....
স্বপ্নীল বাংলাদেশী নারী
৩/১২/২০১১